Tuesday, May 30, 2023

 

বিপজ্জনক ‘ডারিয়েন গ্যাপ’ পার হওয়া শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৮ গুণ বেড়েছে: ইউনিসেফ


কলম্বিয়া-পানামার মধ্যকার বিপজ্জনক বিস্তৃত
জঙ্গল ‘ডারিয়েন গ্যাপ’ পার হওয়া শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা চলতি বছরের প্রথম চার মাসে দ্রুত বেড়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ চেষ্টা করা হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীর জন্য ‘ডারিয়েন গ্যাপ’ এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে।

দক্ষিণ আমেরিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষায় অপরাধীদের আনাগোনা থাকা এই ভয়ংকর জঙ্গল এলাকা অতিক্রম করতে পিছপা হন না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করে রেকর্ড ২৫ হাজার ৪৩১ জন শিশু-কিশোর-কিশোরী পানামায় প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে সঙ্গীসহ ও সঙ্গীবিহীন উভয় ধরনের শিশু ছিল।

ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময়ের (জানুয়ারি-এপ্রিল) তুলনায় ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রমকারী শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা আট গুণ বেশি। গত বছরের প্রথম চার মাসে তিন হাজারের বেশি শিশু ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করেছিল।

ইউনিসেফ বলেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বা অভিভাবক ছাড়াই অপ্রাপ্তবয়স্করা ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করে ক্রমবর্ধমানভাবে পানামায় আসছে।

বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হয়ে থাকে। এ কারণে এই সময়ে ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করা অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা কমে যায়। অভিবাসন বিশ্লেষকদের ধারণা, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ডারিয়েন গ্যাপ অতিক্রম করা শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Monday, May 29, 2023

বাঁশের ঘরে নতুন সাজে বঙ্গবাজার, ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা




বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর ঈদুল ফিতরের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার অনুমতি পেলেও তখন অনেকে দোকান নিয়ে বসেননি। অর্ধেক ফাঁকা পড়ে ছিল। যাঁরা ব্যবসা শুরু করেছিলেন, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ভালো ব্যবসাও হয়নি তাঁদের। ঈদের পর তাই তোড়জোড় শুরু হয় বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরির। রোদ ও বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে ত্রিপলের ছাউনিও দেওয়া হয়। তাতে নতুনভাবে সেজেছে বঙ্গবাজার।
তবে যে কারণে এত আয়োজন, সেই ক্রেতাসমাগম এখনো কম বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।
আজ সোমবার সারা দিন বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে আছেন। জানালেন, ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তবু আশা নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আগামী মাসের শুরুতে বেচাকেনা কিছুটা বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাঁদের। এখন তাঁরা নতুন ঘরে ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
কথা হলো খান গার্মেন্টসের বিক্রেতা মো. নাসিরের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি জানালেন, সকাল ৯টায় দোকান খুলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একটি পণ্যও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
‘সামনে আরেকটা ঈদ আসছে, আগে এ সময়ও কিছু বেচাকেনা হতো, এবার তা নেই। অনেকে জানেন বঙ্গবাজার পুড়ে গেছে, এ জন্য হয়তো আসছেন না। আমরা চেষ্টা করছি পরিচিত ক্রেতাদের জানাতে যে আমরা আবার দোকান নিয়ে বসেছি, ব্যবসায় ফিরতে চেষ্টা করছি,’ বলছিলেন তিনি।
একই অভিজ্ঞতা না হলেও বন্ধু ফ্যাশনের মনির হোসেনের অবস্থাও যে খুব ভালো গেছে তা বলা যাবে না। পাইকারি এই ব্যবসায়ী বলেন, সারা দিন অপেক্ষা করে বিকেল চারটার দিকে তিনি একজন ক্রেতা পেয়েছেন। পাইকারিতে তাঁর কাছে সাড়ে সাত হাজার টাকার প্যান্ট বিক্রি করেছেন তিনি। তাতে তাঁর ৪০০–৫০০ টাকা থাকবে।
মনির হোসেন বলেন, ‘সারা দিনের খরচ বাদ দিয়ে যা থাকবে, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হবে। এখন আমাদের দিনকাল এভাবেই চলছে, অথচ একটা সময় আমরা অনেক ভালো ছিলাম। ভাগ্য আজকে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আবার হয়তো কখনো ভালো দিন আসবে।’
বঙ্গবাজারের দোকানিরা এখন বসছেন বাঁশের তৈরি ঘরে। তবে স্থায়ী মার্কেট তৈরির জন্য এই স্থাপনা আবার ভেঙে ফেলতে হতে পারে—এমন খবরে ব্যবসায়ীদের অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক দেখা গেছে। কারণ, অনেকটা গুচ্ছ পদ্ধতিতে তৈরি এসব ঘরের পেছনেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দোকান চালুর পর থেকে কমবেশি কিছু ক্রেতা বঙ্গবাজারে আসছেন। তবে দোকান বসানোর সময়ই ব্যবসায়ীদেরকে বলা হয়েছে এই ব্যবস্থা অস্থায়ী। আর এভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করাও সম্ভব নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আমরা নিয়মিত আলোচনা করে যাচ্ছি। আশা করি মার্কেট নির্মাণের দিনক্ষণ দ্রুত চূড়ান্ত হবে।’
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের আগুনে পুড়ে সব হারিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। নতুনভাবে শুরু করতে তাই এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ধারদেনার আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের চেয়ে পারিবারিক সহায়তায়ই বেশি নিচ্ছেন।
ছাত্তার এন্টারপ্রাইজের আবদুস ছাত্তার প্রথম আলোকে জানান, তিনি কোনো অনুদান পাননি। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ করে ব্যবসা শুরু করার মতো পরিস্থিতিও তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘এদিকে হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। আশপাশের অনেকের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৮০ হাজার টাকার মালামাল উঠিয়েছি।’
এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছাড়তে হবে—এমনটি মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। মারহা প্যান্ট হাউস ও মাজিদ গার্মেন্টস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক শেখ মনির বলেন, দুই দোকান মিলে তিনি এক হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন এই ব্যবসায়ী।
বেচাকেনা হচ্ছে না জেনেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বঙ্গবাজারে ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন। তেমনই একজন মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের মালিক মো. নেয়ামত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকেই গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছি। এখন মালামাল ওঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। ব্যবসা ভালো চলছে না জানি, তারপরও বসে থাকার উপায় নেই।’
নেয়ামত উল্লাহ মনে করেন, বেচাকেনা চালু করার পর শুরুতে সংসার খরচের টাকা হয়তো উঠবে না। তবে তাঁর নিজের খরচের টাকা উঠে আসবে সেই প্রত্যাশায় নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে চান এই ব্যবসায়ী।
তবে কিছু ক্রেতা কেনাকাটার জন্য বঙ্গবাজারে আসা শুরু করেছেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ ঈমন খান; ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও রাজধানীর ডেমরা এলাকার বাসিন্দা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সবার জন্য আমি বঙ্গবাজার থেকে কেনাকাটা করতাম। আজকেও বেশ কিছু কেনাকাটা করলাম।’ মার্কেট পুড়ে যাওয়ার পর গত ঈদে বঙ্গবাজার থেকেই তিনি কেনাকাটা করেছেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগর ও আদর্শ) মিলে দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর কাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া দোকানের মালিক-কর্মচারীদের মানবিক ও মানসিক বিপর্যয়সহ ক্ষতির পরিমাণ এবং চাকরিহীনতার আর্থিক মাপকাঠি নিরূপণ করা দুরূহ বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

 সোর্স - দৈনিক প্রথম আলো 



Sunday, May 28, 2023

 

মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ








বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে; ব্যাংক খাতের মূল্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ঋণ পরিশোধ না করার পরিমাণ গত মার্চ শেষে এক বছর আগের তুলনায় যেমন বেড়েছে, তেমনি সবশেষ তিন মাসের ব্যবধানেও ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে বিবরণী তৈরি করেছে তাতে দেখা যায় চলতি বছরের মার্চ শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; ২০২২ সালের একই সময়ের চেয়ে তা ১৬ শতাংশ বা ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেশি।

অপরদিকে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ শতাংশ বা ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে বিতরণ করা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চ শেষে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ডিসেম্বরে খেলাপির যে তথ্য ব্যাংকগুলো জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের পর আরও কিছু নতুন খেলাপি পাওয়া গেছে।

এছাড়া পুরনো খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ যোগ হওয়ায় তা এমনিতেই কিছুটা বেড়ে থাকে বলে যোগ করেন তিনি।

দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত বিপুল এ খেলাপি ঋণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ছাড়া কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে তা এখন আর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘পুনঃতফসিল, উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাখাসহ অনিয়মের ঋণগুলো হিসাব করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হয়ে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আইএমএফও একবার বলেছিল খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক যা দেখায়, তার চেয়ে বেশি হবে।’’

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে বিতরণ করা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চ শেষে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ডিসেম্বরে খেলাপির যে তথ্য ব্যাংকগুলো জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের পর আরও কিছু নতুন খেলাপি পাওয়া গেছে।

এছাড়া পুরনো খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ যোগ হওয়ায় তা এমনিতেই কিছুটা বেড়ে থাকে বলে যোগ করেন তিনি।

দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত বিপুল এ খেলাপি ঋণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ছাড়া কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে তা এখন আর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘পুনঃতফসিল, উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাখাসহ অনিয়মের ঋণগুলো হিসাব করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হয়ে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আইএমএফও একবার বলেছিল খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক যা দেখায়

খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণও জানুয়ারি শেষে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি হয়ে যাওয়া আদায় অযোগ্য ঋণকে তিন বছর পর অবলোপন (রাইট) করতে পারে ব্যাংক, যা খেলাপির তালিকায় না রেখে পৃথক একটি খাতায় হিসাব রাখতে হয়। ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো এ সুযোগ পাচ্ছে।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে আর খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও সেই ক্ষমতা নেই তার। এখন সরকারকেই সৎ সাহস দেখাতে হবে অস্বাভাবিক সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

‘‘সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পানাতেও ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে সরকার। সরকার নিজেই যে সমস্যার কথা চিহ্নিত করেছে-তা বাস্তবায়নেও সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আইএমএফও আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে।’’

খেলাপিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রধান কারণ জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতীয় সংসদে একাধিকবার খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কই তাদের শাস্তি দিতে তো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?

২০১৯ সালে শীর্ষ ৩০০ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করে সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছিলেন, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা।


অপরদিকে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ শতাংশ বা ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে বিতরণ করা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চ শেষে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও পরিচালক সারোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ডিসেম্বরে খেলাপির যে তথ্য ব্যাংকগুলো জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের পর আরও কিছু নতুন খেলাপি পাওয়া গেছে।

এছাড়া পুরনো খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ যোগ হওয়ায় তা এমনিতেই কিছুটা বেড়ে থাকে বলে যোগ করেন তিনি।

দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত বিপুল এ খেলাপি ঋণ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার ছাড়া কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে তা এখন আর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘পুনঃতফসিল, উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রাখাসহ অনিয়মের ঋণগুলো হিসাব করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হয়ে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আইএমএফও একবার বলেছিল খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক যা দেখায়, তার চেয়ে বেশি হবে।’’খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণও জানুয়ারি শেষে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি হয়ে যাওয়া আদায় অযোগ্য ঋণকে তিন বছর পর অবলোপন (রাইট) করতে পারে ব্যাংক, যা খেলাপির তালিকায় না রেখে পৃথক একটি খাতায় হিসাব রাখতে হয়। ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো এ সুযোগ পাচ্ছে।

সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে আর খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও সেই ক্ষমতা নেই তার। এখন সরকারকেই সৎ সাহস দেখাতে হবে অস্বাভাবিক সুবিধা নেওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

‘‘সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পানাতেও ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে সরকার। সরকার নিজেই যে সমস্যার কথা চিহ্নিত করেছে-তা বাস্তবায়নেও সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আইএমএফও আর্থিক খাতের সংস্কারের কথা বলেছে।’’

খেলাপিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রধান কারণ জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতীয় সংসদে একাধিকবার খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কই তাদের শাস্তি দিতে তো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?

২০১৯ সালে শীর্ষ ৩০০ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করে সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছিলেন, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি 

এরপর গত জানুয়ারিতে শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা সংসদে প্রকাশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদের কাছে ব্যাংকের পাওনা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, ৮৬ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ীদের নানা ছাড় ও সুবিধা দিয়ে আসা বাংলাদেশ ব্যাংক কোভিড মহামারী ও পরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময়েও বিশেষ ছাড় দিয়েছিল। এরপরও তা কমেনি।

এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিলের দায়িত্ব কিছু শর্ত রেখে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংককেই দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ বিবরণী অনুযায়ী, মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা, খেলাপির হার ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে তা ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ; বিদেশি ব্যাংকে ৩ হাজার ৪১ কোটি, খেলাপির হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকে ৪ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা ও খেলাপির হার ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

খেলাপিদের তিরষ্কারের বদলে বিভিন্ন সময়ে নানা ছাড় দিয়ে পুরস্কৃত করায় ব্যাংকিং খাতের প্রধান এ সংকট কাটছে না বলে মনে করছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘ঋণ খেলাপিদের একের পর এক ছাড় বা সুবিধা দেওয়া বহাল রাখলে তারা কখনই টাকা ফেরত দেবে না। আরও সুবিধার চাইতে থাকবে-এটা খুব স্বাভাবিক নিয়ম।’’

এমন প্রেক্ষাপটে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও উদ্যোগী হতে হবে। ন্যূনতম জায়গায় রেখে নগদ লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেন নির্ভর হতে হবে। কেউ খেলাপি হলে তার সব ধরনের কার্ড লেনদেন সুবিধা বাতিল করতে হবে।

‘‘খেলাপিরা বিমান ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। ট্রেনে প্রথম শ্রেণির সুবিধা বাতিলসহ সামাজিক বিভিন্ন সুবিধা বাতিল করার উদ্যোগ না নেওয়া পর্যন্ত খেলাপি কমানো দূরহ।’’


  বিপজ্জনক ‘ডারিয়েন গ্যাপ’ পার হওয়া শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৮ গুণ বেড়েছে: ইউনিসেফ কলম্বিয়া-পানামার মধ্যকার বিপজ্জনক বিস্তৃত জঙ্গল ‘ডার...